হজ্জ কি এবং কেন?
হজ্জ কি এবং কেন?
হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি
অন্যতম স্তম্ভ। যে সকল নর- নারীর শারীরিক সুস্থতা এবং
আর্থিক স্বচ্ছলতা রয়েছে কেবল তাদের জন্যই জীবনে একবার হজ্জ আদায় করা অবশ্য করণীয়
বা ফরজ এবাদত। অধিক বয়সের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম বয়সে
শারীরিক সুস্থতা থাকা অবস্থায় হজ্জ করা শ্রেয়ঃ। আল্লাহকে রাজী-খুশি করানো এবং বেহেশতে যাওয়ার অন্যতম পথ হলো
হজ্জ। মকবুল হজ্জ আদায় কারী হাজী সদ্য প্রসূত শিশুর ন্যয় নিষ্পাপ। হজ্জে দারিদ্রতা ও গুনাহ সমূহ বিদুরিত হয়। মকবুল হজ্জ আদায়কারী একজন হাজীর পরিবারের চারশ ব্যক্তির সুপারিশ
আল্লাহ কবুল করেন। হজ্জের নিয়তে বের হওয়া ব্যক্তি হজ্জে
যাওয়ার রাস্তায় মারা গেলে তিনি গাজী বা হাজীর সওয়াব প্রাপ্ত হন। ইহরাম পরা অবস্থায় কোন লোক মারা গেলে তিনি কিয়ামতের দিন
লাব্বাইকা বলতে বলতে কবর হতে উঠবেন। কেউ যদি হজ্জ হতে
ফেরার পথে মারা যান, আল্লাহ্ তাকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন। হেরেম শরীফে এক ওয়াক্ত নামায আদায়ের নেকি সাধারণ একলক্ষ নেকীর
সমান এবং মসজিদে নববীর নেকী সাধারণ নেকীর পঞ্চাশ হাজার নেকীর সমান। পবিত্র কোরআন শরীফে একাধিক সুরায় হজ্জ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’য়ালা আয়াত নাযিল
করেছেন। হাদীস শরীফেও হজ্জ সম্পর্কে অনেক মূল্যবান
কথা বলা আছে।
ওমরাহ কি?
ওমরাহ আরবি শব্দ। ওমরাহর আভিধানিক অর্থ হলো ধর্ম, কর্ম, ইবাদত, সুখকর, সেবা, স্থিতিশীল, জীবন, মহাপ্রাচীন, স্থাপত্য-স্থাপনা, প্রাপ্তি, অভ্যর্থনা, জিয়ারত বা সফর ও ইচ্ছা। শরীয়তের ভাষায়- শরীয়ত নির্দেশিত বিশেষ পদ্ধতিতে
ইহরামসহ, ক্বা’বা
শরীরে চর্তুদিকে তাওয়াফ করা, ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড়দ্বয়ের মধ্যস্থলে সাঈ করা এবং মাথা
মুন্ডানোকে ওমরাহ বলে৷ এটিকে ‘ওমরা’ও বলা হয়৷ এ সম্পর্কে কোরআন করিমে রয়েছে: ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির
অন্যতম; তাই যারা হজ করবে বা ওমরাহ করবে, তারা এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ (সায়ী) করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৮)। ওমরাহ পালন করা
গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। এটি পুরুষ ও মহিলা
সবার জন্য প্রযোজ্য। ওমরাহ করলে হজ ফরজ
হয়ে যায়, এ রকম কোনো বিধান নেই। মক্কা-মদিনার প্রতি আকর্ষণ ও হৃদয়ের টান ইমানের
পরিচায়ক।
তাই অনেকে প্রেমের টানে বারবার হজ ও ওমরাহ
করে থাকেন।
রমজানে ওমরাহ পালন করা হজের সমান সওয়াব; শাওয়াল মাসও ওমরাহ করার জন্য উত্তম সময়।
ওমরা করার সময়ঃ
ওমরাহ সম্পাদনের বিশেষ কোনো সময় সুনির্দিষ্ট নেই; তবে হজের নির্ধারিত বিশেষ সময়ে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ
পর্যন্ত পাঁচ দিন) ওমরাহ পালন করা বিধেয় নয়; এই পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় ওমরাহ প্রতিপালন
করা যায়। হজের সফরেও ওমরাহ করা যায়। একই সফরে একাধিক ওমরাহ করতেও বাধা নেই। হজের আগেও (হজ না করেও) ওমরাহ করা যায় এবং হজের পরও বারবার
ওমরাহ করা যায়।
ওমরাহর নির্দিষ্ট কাজকর্মঃ
ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, হলক, কছর ইত্যাদিই হচ্ছে
ওমরাহর প্রধান কাজ। ওমরাহর নির্ধারিত স্থান হলো কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া ইত্যাদি। আফাকি তথা দূরবর্তী ওমরাহ সম্পাদনকারীর জন্য মদিনা মুনাওয়ারায়
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত।
কাবা শরীফঃ
পৃথিবীর সর্ব প্রথম ঘর বায়তুল্লাহ
শরীফ বা কাবা আরবের পবিত্র ভুমি মক্কায় অবস্থিত। মক্কা হলো পৃথিবীর সর্বাধিক মর্যাদা
সম্পন্ন শহর এখানেই মূল বসতি। আদম (আঃ) এর সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে কাবা শরীফ প্রথম
নির্মাণ করেন ফেরেস্তাগণ। পরবর্তীতে
বায়তুল মামুরের সরাসরি নীচে পৃথিবীর পাঁচটি পাহাড় থেকে পাথর এনে দ্বিতীয়বার
নির্মাণ করেন হজরত আদম (আঃ)। তৎপরে তৃতীয়বার হজরত আদম (আঃ) এর পুত্র শীষ (আঃ) এবং আরও পরে
হজরত ইবরাহীম (আঃ), তাঁর
পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে সঙ্গে নিয়ে কাবাগৃহ পুনরায় নির্মাণ করেন। (সুরা বাকারা ঃ ১২৭ আয়াত)। হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কাবা গৃহ
নির্মাণের পূর্বে কাবা গৃহের পুরাতন ভিত্তি মাটির নিচে চাপা পড়েছিল। আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তা জিব্রাইল (আঃ)
কে পাঠিয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে ঐ স্থানটি দেখিয়ে দেন। নবী হযরত ইবরাহীম (আঃ), পুত্র নবী ইসমাইল (আঃ) কে সঙ্গে নিয়ে সেই ভিত্তির উপর কাবাশরীফ পুণরায়
নির্মাণ করেন। যা
পবিত্র কোরআন মজিদের সুরা হজ্জ ২৬ আয়াতে নির্মাণ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া
হয়েছে।
মহান আল্লাহ কাবাগৃহ নিজে রক্ষা
করে থাকেন। যা
বিভিন্ন ঘটনাবলীতে প্রমাণ হয়েছে। এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো। ৫৭০ খ্রি. ইয়ামেনের শাসনকর্তা ছিলেন
আবরাহা। সে
সময় আরব দেশে খৃষ্ট ধর্ম প্রচার করা এবং আরবদের ব্যবসায় করায়ত্ব করার জন্যে
ইয়ামেনের রাজধানী সানায় আবরাহা একটি বিরাট গির্জা নির্মাণ করেন। এর নাম ছিল ‘আল কুলাইস’ বা ‘আল কালীস’। মক্কায়
হজ্জ অনুষ্ঠান বন্ধ করে সকলকে এ গির্জায় হজ্জ স্থানান্তরিত করা ছিল উদ্দেশ্য। এ কথা আবরাহা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দেন। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে জনৈক আরব গির্জায় প্রবেশ করে মলমুত্র ত্যাগ করেন। মতান্তরে কতিপয় কুরাইশ যুবক এ গির্জায়
আগুন ধরিয়ে দেন। কারও
কারও মতে আবরাহা নিজেই তার লোক দ্বারা এরূপ কাজ করে একটি ছুতা তৈরি করে সহজেই
কাবাগৃহে আক্রমণ চালানোর পথ তৈরি করেন। সে যাহোক আবরাহা কাবাগৃহকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে ৫৭০ বা ৫৭১ খৃষ্টাব্দে
৬০ হাজার
সৈন্য ও একদল হাতি নিয়ে মক্কার
দিকে যাত্রা করেন।
![]() |
কাবা শরীফ |
পথে প্রথমে ইয়ামেনের যু-নফর
নামক জনৈক সরদার আরবদের একটি বাহিনী দ্বারা তার গতিরোধ করার চেষ্টা করে পরাজয় বরণ
করেন। তারপর খাশয়াম অম্বলে নুফাইল ইবনে হাবীব খাশয়ামা নামক জনৈক আরব গোত্র
পতি তার ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে আবরাহাকে গতি রোধ করার চেষ্টা করে পরাজিত হয়ে গ্রেফতার
হন। এরপর তায়েফ পৌঁছালে বনু সাকীফ গোত্র
যুদ্ধ করার অভিপ্রায় থাকলেও বিরাট বাহিনী দেখে পিছনে হটে যান। বনু সাকীফ গোত্র আবু রিগাল নামক এক
ব্যক্তিকে মক্কার পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্যে সঙ্গে দেন। আল মুগাম্মাস নামক স্থানে আবু রিগাল
মৃত্যুবরণ করে। বনু
সাকীফ গোত্রের উদ্দেশ্য ছিল তাদের লাত মন্দির যাতে আবরাহার আক্রমণ হতে রক্ষা করা
যায়।
আবরাহার বাহিনী মক্কার কাছাকাছি পৌঁছে কুরাইশদের অনেক পালিত পশু লুট করে নিয়ে যায়। লুট কৃত পশুর মধ্যে রাসুল (সা.) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের দুইশত উষ্ট্র ছিল। আবরাহার সংবাদে অথবা নিজ পশুগুলো উদ্ধারের নিমিত্তে মক্কার তখনকার প্রধান সর্দার আবদুল মুত্তালিব আবরাহার তাবুতে গিয়ে দেখা করেন। আবদুল মুত্তালিব সুশ্রী, বলিষ্ঠ ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক ছিলেন। আবরাহা তাঁকে দেখে মুগ্ধ হন। আবদুল মুত্তালিব তাঁর লুণ্ঠিত পশুগুলো ফেরত চাইলেন। আবরাহা বললেন আমি তো মনে করেছি আপনি মক্কার কাবাগৃহ রক্ষা করার প্রার্থনা করবেন। আপনিতো তেমন কিছু বললেন না। তখন আবদুল মুত্তালিব বললেন আমি তো শুধু ঐ উটগুলোরই মালিক। কাবাগৃহের একজন ‘রব’ আছেন। তিনি নিজেই তাঁর ঘর হেফাজত করবেন।’ এ কথা বলে উটগুলোসহ আবদুল মুত্তালিব চলে আসেন।
প্রকৃত পক্ষে আবরাহার বিশাল বাহিনী মোকাবিলা করার শক্তি কোরাইশ গোত্রের না থাকায় তাঁরা আবরাহাকে প্রতিরোধ করেনি। আবদুল মুত্তালিব ফিরে এসে আরও গোত্র প্রধানদের নিয়ে কাবাগৃহের দরজা ধরে আল্লাহ তায়ালার নিকট কাবাগৃহ রক্ষার জন্যে দোয়া করেন। আবদুল মুত্তালিব যে দোয়া পাঠ করেছিলেন তার কিছু কথা হলো,
হে খোদা! বান্দা নিজের ঘরের সংরক্ষণ করে
তুমিও রক্ষা কর তোমার নিজের ঘর।
হে আমার খোদা এ লোকদের মোকাবিলায়
আমি তোামকে ছাড়া আর কারও নিকট আশা করিনা।
আল্লাহর নিকট এ সব দোয়া করার পর আবদুল মুত্তালিব ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা পাহাড়ে আশ্রয় নিলেন।
পরের দিন আবরাহা মক্কায় প্রবেশের জন্যে অগ্রসর হলে অগ্রভাগে অবস্থিত হস্তী মাটিতে বসে পড়ল। তাকে মারতে মারতে নানা ভাবে চেষ্টা করেও এক পা অগ্রসর করানো গেল না। এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দু’পাখা ও ঠোঁটে পাথর কুচি এনে সৈন্য ও হাতীগুলোর উপর বর্ষণ করতে লাগল। পাথর কুচিগুলো যার উপর পড়ত সে সৈন্য ও পশুগুলো পচে গলে মরে যেত। আবরাহার শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতে থাকল। ফলে সৈন্যগণ নিরুপায় ও পাগলপ্রায় হয়ে পালাতে থাকে। কিন্তু কেহই আল্লাহর হাত হতে রক্ষা পায়নি। সকলেই ধ্বংস হল।
এ ঘটনাটি ঘটেছিল মুযদালিফা ও মিনার মাঝখানে ‘মুহাচ্ছব’ উপত্যকার নিকটে ‘মুহাসসির’ নামক স্থানে। এ কারণে হাজীগণ এ স্থান অতিক্রম করার সময় দ্রুত চলে থাকেন। আরববাসীগণ এ বর্ষটিকে ‘হস্তী বর্ষ’ নামে অভিহিত করেন। বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে উদ্বৃতিতে জানা যায় কুরাইশরা ৭ বৎসর কিংবা ১০ বৎসর কাল পর্যন্ত লা শরীক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করেনি। ঐ বৎসরই নবী করীম (সা.) এর জন্ম হয়েছিল। যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ কোরআন মজীদের “সুরা ফীলে” বর্ণিত হয়েছে।
সে সময় কাবাগৃহে ৩৬০ টি ছোট বড় মুর্তি ছিল। মক্কা ছিল মূর্তি পুজারীদের কেন্দ্র স্থল। নানা রকম কু রেওয়াজ চালু ছিল লোকদের মধ্যে। লোকেরা সম্পূর্র্ণ উলঙ্গ অবস্থায় কাবা ঘরের তাওয়াফ করত। হিজরী দ্বিতীয় সালে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদীনা শরীফের মসজিদে কেবলাতাইনে বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা করে নামায পড়ার সময় কাবা শরীফকে কেবলা করে নামায পড়ার নির্দেশ আসে। ঐ নামাযেই নবীজী কেবলা পরিবর্তন করে কাবা শরীফকে কেবলা করে নামায আদায় করেন । সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত পবিত্র কাবা শরীফকে কেবলা করে সারা পৃথিবীর মুসলমানগণ নামায আদায় করে আসছেন। কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানগণ কাবা শরীফকে কেবলা করে নামায আদায় করবেন।
অষ্টম হিজরীতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিনা যুদ্ধে মক্কা জয় করেন। কাবা গৃহে নবীজী ঢুকে নিজ হস্তের লাঠি দ্বারা সকল মুর্তি অপসারণ করে দেন। তাঁর মুখে উচ্চারিত হয় কোরআন মজীদের বনী ইসরাইলের ৮১ আয়াত। যার অর্থ হল! “বল সত্য এসে গেল, মিথ্যা অপসৃত হল। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপÍ হওয়ারই ছিল।”
আবরাহার বাহিনী মক্কার কাছাকাছি পৌঁছে কুরাইশদের অনেক পালিত পশু লুট করে নিয়ে যায়। লুট কৃত পশুর মধ্যে রাসুল (সা.) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের দুইশত উষ্ট্র ছিল। আবরাহার সংবাদে অথবা নিজ পশুগুলো উদ্ধারের নিমিত্তে মক্কার তখনকার প্রধান সর্দার আবদুল মুত্তালিব আবরাহার তাবুতে গিয়ে দেখা করেন। আবদুল মুত্তালিব সুশ্রী, বলিষ্ঠ ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক ছিলেন। আবরাহা তাঁকে দেখে মুগ্ধ হন। আবদুল মুত্তালিব তাঁর লুণ্ঠিত পশুগুলো ফেরত চাইলেন। আবরাহা বললেন আমি তো মনে করেছি আপনি মক্কার কাবাগৃহ রক্ষা করার প্রার্থনা করবেন। আপনিতো তেমন কিছু বললেন না। তখন আবদুল মুত্তালিব বললেন আমি তো শুধু ঐ উটগুলোরই মালিক। কাবাগৃহের একজন ‘রব’ আছেন। তিনি নিজেই তাঁর ঘর হেফাজত করবেন।’ এ কথা বলে উটগুলোসহ আবদুল মুত্তালিব চলে আসেন।
প্রকৃত পক্ষে আবরাহার বিশাল বাহিনী মোকাবিলা করার শক্তি কোরাইশ গোত্রের না থাকায় তাঁরা আবরাহাকে প্রতিরোধ করেনি। আবদুল মুত্তালিব ফিরে এসে আরও গোত্র প্রধানদের নিয়ে কাবাগৃহের দরজা ধরে আল্লাহ তায়ালার নিকট কাবাগৃহ রক্ষার জন্যে দোয়া করেন। আবদুল মুত্তালিব যে দোয়া পাঠ করেছিলেন তার কিছু কথা হলো,
হে খোদা! বান্দা নিজের ঘরের সংরক্ষণ করে
তুমিও রক্ষা কর তোমার নিজের ঘর।
হে আমার খোদা এ লোকদের মোকাবিলায়
আমি তোামকে ছাড়া আর কারও নিকট আশা করিনা।
আল্লাহর নিকট এ সব দোয়া করার পর আবদুল মুত্তালিব ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা পাহাড়ে আশ্রয় নিলেন।
পরের দিন আবরাহা মক্কায় প্রবেশের জন্যে অগ্রসর হলে অগ্রভাগে অবস্থিত হস্তী মাটিতে বসে পড়ল। তাকে মারতে মারতে নানা ভাবে চেষ্টা করেও এক পা অগ্রসর করানো গেল না। এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দু’পাখা ও ঠোঁটে পাথর কুচি এনে সৈন্য ও হাতীগুলোর উপর বর্ষণ করতে লাগল। পাথর কুচিগুলো যার উপর পড়ত সে সৈন্য ও পশুগুলো পচে গলে মরে যেত। আবরাহার শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতে থাকল। ফলে সৈন্যগণ নিরুপায় ও পাগলপ্রায় হয়ে পালাতে থাকে। কিন্তু কেহই আল্লাহর হাত হতে রক্ষা পায়নি। সকলেই ধ্বংস হল।
এ ঘটনাটি ঘটেছিল মুযদালিফা ও মিনার মাঝখানে ‘মুহাচ্ছব’ উপত্যকার নিকটে ‘মুহাসসির’ নামক স্থানে। এ কারণে হাজীগণ এ স্থান অতিক্রম করার সময় দ্রুত চলে থাকেন। আরববাসীগণ এ বর্ষটিকে ‘হস্তী বর্ষ’ নামে অভিহিত করেন। বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে উদ্বৃতিতে জানা যায় কুরাইশরা ৭ বৎসর কিংবা ১০ বৎসর কাল পর্যন্ত লা শরীক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করেনি। ঐ বৎসরই নবী করীম (সা.) এর জন্ম হয়েছিল। যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ কোরআন মজীদের “সুরা ফীলে” বর্ণিত হয়েছে।
সে সময় কাবাগৃহে ৩৬০ টি ছোট বড় মুর্তি ছিল। মক্কা ছিল মূর্তি পুজারীদের কেন্দ্র স্থল। নানা রকম কু রেওয়াজ চালু ছিল লোকদের মধ্যে। লোকেরা সম্পূর্র্ণ উলঙ্গ অবস্থায় কাবা ঘরের তাওয়াফ করত। হিজরী দ্বিতীয় সালে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদীনা শরীফের মসজিদে কেবলাতাইনে বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা করে নামায পড়ার সময় কাবা শরীফকে কেবলা করে নামায পড়ার নির্দেশ আসে। ঐ নামাযেই নবীজী কেবলা পরিবর্তন করে কাবা শরীফকে কেবলা করে নামায আদায় করেন । সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত পবিত্র কাবা শরীফকে কেবলা করে সারা পৃথিবীর মুসলমানগণ নামায আদায় করে আসছেন। কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানগণ কাবা শরীফকে কেবলা করে নামায আদায় করবেন।
অষ্টম হিজরীতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিনা যুদ্ধে মক্কা জয় করেন। কাবা গৃহে নবীজী ঢুকে নিজ হস্তের লাঠি দ্বারা সকল মুর্তি অপসারণ করে দেন। তাঁর মুখে উচ্চারিত হয় কোরআন মজীদের বনী ইসরাইলের ৮১ আয়াত। যার অর্থ হল! “বল সত্য এসে গেল, মিথ্যা অপসৃত হল। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপÍ হওয়ারই ছিল।”
নবম হিজরীতে হজ্জের সময় হতে
মক্কা নগরীতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) আমীরুল
হজ্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ বছরের পর থেকে অপবিত্র মুশরিকদের জন্যে বায়তুল্লাহ শরীফ
নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।
দশম হিজরীতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই হাজীগণের নেতৃত্ব দান করে পবিত্র হজ্জ আদায় করেন। আর এটাই হলো বিদায় হজ্জ। কাবা শরীফ মুসলমানদের একচ্ছত্র অধিকারে এসে যায়, হয়ে যায় পবিত্র হারাম শরীফ। অদ্যাবধি কাবাশরীফ মুসলমানদের নিয়ন্ত্রিত মহা পবিত্র স্থান।
কাবা শরীফের কতিপয় বৈশিষ্ট্য
১. প্রশ্রাব পায়খানার সময় কাবা শরীফকে পেছনে বা সামনে রাখা
শরীয়তে নিষিদ্ধ।
২. কাবা ঘরকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজানো সওয়াব। কাবাগৃহে
সিল্কের গিলাফ লাগানো বৈধ। হযরত ওমর (রাঃ) প্রতি বছর কাবাঘরের গিলাফ পাল্টিয়ে লাগাতেন। জাহিলিয়াতের যুগেও কাবা ঘরের গিলাফ পরিবর্তন করে নতুন গিলাফ লাগানো হতো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও কাবা ঘরের গিলাফ পরিবর্তন করেছেন বলেও জানা যায়।
৩. বায়তুল্লাহ বা কাবা ঘরে সুগন্ধি লাগানোও সওয়াবের কাজ। আল্লাহ
তা’আলা পবিত্র কোরআনে তাঁর ঘরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
৪. কাবা ঘর রক্ষা করার দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলা নিজ হস্তে নিয়েছেন।
হস্তিবাহিনী সহ বিভিন্ন সময়ে কাবাঘর ধংস হতে সংরক্ষন নিজেই করেছেন।
৫. শয়তান বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারলেও কাবাঘর ও মহানবী (সাঃ)
এর রূপ ধারন করতে পারে না।
৬. বৎসরের সকল মাস, দিন, ঘন্টা, মিনিট, অর্থাৎ সকল সময়ে বিরতী-
হীনভাবে কাবা ঘরের তাওয়াফ হতে থাকে। মানুষ, ফেরেস্তা, জ্বিনদের তাওয়াফ থেকে এটি এক মুহূর্তও বাদ যায় না।
৭. হযরত নুহ (আঃ) এর মহাপ্লাবনে কাবা ঘর শুন্যে ঝুলতে থাকে সে
কারণে নুহ (আঃ) এর জাহাজ কাবাঘর তাওয়াফ করতে থাকে।
৮. শেষ বিচারের দিন কাবা শরীফ সুসজ্জিত থাকবে। হাজীরা এর গিলাফ
ধরে থাকবে। কাবা শরীফ তাদের বেহেস্তে প্রবেশ করিয়ে দিবে।
দশম হিজরীতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই হাজীগণের নেতৃত্ব দান করে পবিত্র হজ্জ আদায় করেন। আর এটাই হলো বিদায় হজ্জ। কাবা শরীফ মুসলমানদের একচ্ছত্র অধিকারে এসে যায়, হয়ে যায় পবিত্র হারাম শরীফ। অদ্যাবধি কাবাশরীফ মুসলমানদের নিয়ন্ত্রিত মহা পবিত্র স্থান।
কাবা শরীফের কতিপয় বৈশিষ্ট্য
১. প্রশ্রাব পায়খানার সময় কাবা শরীফকে পেছনে বা সামনে রাখা
শরীয়তে নিষিদ্ধ।
২. কাবা ঘরকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজানো সওয়াব। কাবাগৃহে
সিল্কের গিলাফ লাগানো বৈধ। হযরত ওমর (রাঃ) প্রতি বছর কাবাঘরের গিলাফ পাল্টিয়ে লাগাতেন। জাহিলিয়াতের যুগেও কাবা ঘরের গিলাফ পরিবর্তন করে নতুন গিলাফ লাগানো হতো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও কাবা ঘরের গিলাফ পরিবর্তন করেছেন বলেও জানা যায়।
৩. বায়তুল্লাহ বা কাবা ঘরে সুগন্ধি লাগানোও সওয়াবের কাজ। আল্লাহ
তা’আলা পবিত্র কোরআনে তাঁর ঘরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
৪. কাবা ঘর রক্ষা করার দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলা নিজ হস্তে নিয়েছেন।
হস্তিবাহিনী সহ বিভিন্ন সময়ে কাবাঘর ধংস হতে সংরক্ষন নিজেই করেছেন।
৫. শয়তান বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারলেও কাবাঘর ও মহানবী (সাঃ)
এর রূপ ধারন করতে পারে না।
৬. বৎসরের সকল মাস, দিন, ঘন্টা, মিনিট, অর্থাৎ সকল সময়ে বিরতী-
হীনভাবে কাবা ঘরের তাওয়াফ হতে থাকে। মানুষ, ফেরেস্তা, জ্বিনদের তাওয়াফ থেকে এটি এক মুহূর্তও বাদ যায় না।
৭. হযরত নুহ (আঃ) এর মহাপ্লাবনে কাবা ঘর শুন্যে ঝুলতে থাকে সে
কারণে নুহ (আঃ) এর জাহাজ কাবাঘর তাওয়াফ করতে থাকে।
৮. শেষ বিচারের দিন কাবা শরীফ সুসজ্জিত থাকবে। হাজীরা এর গিলাফ
ধরে থাকবে। কাবা শরীফ তাদের বেহেস্তে প্রবেশ করিয়ে দিবে।
No comments