দেখুনঃ হযরত আদম (আঃ) এর জীবনী

তৌরাত শরীফের প্রথম সিপারা পয়দায়েশ নামক কিতাবে হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়ার সৃষ্টি ও আদন বাগানের বিষয় পাওয়া যায় এই কিতাব থেকেই আমরা জানতে পারি আল্লাহ্‌তালা কিরূপে বেহেশত, আসমান-জমীন ও তার মধ্যবর্তী সকল জীবন্ত প্রাণী সৃষ্টি করেছেন হযরত আদম (আঃ) ছিলেন মাবুদ আল্লাহ্‌র সৃষ্ট প্রথম মানুষ হযরত আদম সাফীউল্লাহ (আল্লাহ্‌র মনোনীত) নামেও পরিচিত আদম বাগানে প্রথম মানুষ


সৃষ্টির পরে আসমান ও জমীনের কথা: মাবুদ আল্লাহ্‌ যখন আসমান ও জমীন তৈরী করেছিলেন তখন দুনিয়ার বুকে শস্য জাতীয় কোন গাছ-গাছ্‌ড়া ছিল না এবং ফসলও জন্মাতে শুরু করে নি, কারণ তখনও মাবুদ আল্লাহ্‌ দুনিয়ার উপর বৃষ্টি পড়বার ব্যবস্থা করেন নিতা ছাড়া জমিতে চাষের কাজ করবার জন্য কোন মানুষও ছিল নাতবে মাটির তলা থেকে পানি উঠত এবং তাতেই মাটি ভিজতপরে মাবুদ আল্লাহ্‌ মাটি দিয়ে একটি পুরুষ মানুষ তৈরী করলেন এবং তার নাকে ফুঁ দিয়ে তার ভিতরে জীবন্তবায়ু ঢুকিয়ে দিলেনতাতে সেই মানুষ একটি জীবন্ত প্রাণী হলএর আগে মাবুদ আল্লাহ্‌ পূর্ব দিকে আদন দেশে একটা বাগান করেছিলেন, আর সেখানেই তিনি তাঁর গড়া মানুষটিকে রাখলেনসেখানকার মাটিতে তিনি এমন সব গাছ জন্মিয়েছিলেন যা দেখতেও সুন্দর এবং যার ফল খেতেও ভালতা ছাড়া বাগানের মাঝখানে তিনি জীবন-গাছনেকী-বদী-জ্ঞানের গাছ” (গন্ধম)  নামে দুটি গাছও জন্মিয়েছিলেনসেই বাগানে পানির যোগান দিত এমন একটা নদী যেটা আদন দেশের মধ্য থেকে বের হয়েছিল এবং চারটা শাখানদীতে ভাগ হয়ে গিয়েছিলপ্রথম নদীটার নাম পীশোনএটা হবীলা দেশের চারপাশ দিয়ে বয়ে গেছেসেখানে সোনা পাওয়া যায়, আর সেই দেশের সোনা খুব ভালএছাড়া সেখানে গুগ্‌গুলু ও বৈদূর্য মণিও পাওয়া যায়দ্বিতীয় নদীটার নাম জিহোনএই নদী কূশ দেশের চারপাশ দিয়ে বয়ে গেছেতৃতীয় নদীটার নাম দজলাএটা আশেরিয়া দেশের পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছেচতুর্থ নদীটার নাম হল ফোরাতমাবুদ আল্লাহ্‌ সেই মানুষটিকে নিয়ে আদন বাগানে রাখলেন যাতে তিনি তাতে চাষ করতে পারেন ও তার দেখাশোনা করতে পারেনপরে মাবুদ আল্লাহ্‌ তাঁকে হুকুম দিয়ে বললেন, “তুমি তোমার খুশীমত এই বাগানের যে কোন গাছের ফল খেতে পার; কিন্তু নেকী-বদী-জ্ঞানের (গন্ধম) যে গাছটি রয়েছে তার ফল তুমি খাবে না, কারণ যেদিন তুমি তার ফল খাবে সেই দিন নিশ্চয়ই তোমার মৃত্যু হবে


প্রথম স্ত্রীলোকঃ

পরে মাবুদ আল্লাহ্‌ বললেন, “মানুষটির পক্ষে একা থাকা ভাল নয়আমি তার জন্য একজন উপযুক্ত সংগী তৈরী করবমাবুদ আল্লাহ্‌ মাটি থেকে ভূমির যে সব জীবজন্তু ও আকাশের পাখী তৈরী করেছিলেন সেগুলো সেই মানুষটির কাছে আনলেনমাবুদ দেখতে চাইলেন তিনি সেগুলোকে কি বলে ডাকেনতিনি সেই সব প্রাণীগুলোর যেটিকে যে নামে ডাকলেন সেটির সেই নামই হলতিনি প্রত্যেকটি গৃহপালিত ও বন্য পশু এবং আকাশের পাখীর নাম দিলেন, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সেই পুরুষ মানুষটির, অর্থাৎ আদমের কোন উপযুক্ত সংগী দেখা গেল নাসেইজন্য মাবুদ আল্লাহ্‌ আদমের উপর একটা গভীর ঘুম নিয়ে আসলেন, আর তাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেনতখন তিনি তাঁর একটা পাঁজর তুলে নিয়ে সেই জায়গাটা বন্ধ করে দিলেনআদম থেকে তুলে নেওয়া সেই পাঁজরটা দিয়ে মাবুদ আল্লাহ্‌ একজন স্ত্রীলোক তৈরী করে তাঁকে আদমের কাছে নিয়ে গেলেনতাঁকে দেখে আদম বললেন, “এবার হয়েছেএঁর হাড়-মাংস আমার হাড়-মাংস থেকেই তৈরীপুরুষ লোকের শরীরের মধ্য থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এঁকে স্ত্রীলোক বলা হবেএইজন্যই মানুষ পিতা-মাতাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে আর তারা দুজন এক শরীর হবেতখন আদম এবং তাঁর স্ত্রী উলংগ থাকতেন, কিন্তু তাতে তাঁদের কোন লজ্জাবোধ ছিল না

মানুষের অবাধ্যতাঃ

মাবুদ আল্লাহ্‌র তৈরী ভূমির জীবজন্তুদের মধ্যে সাপ (শয়তান) ছিল সবচেয়ে চালাকএই সাপ (শয়তান) একদিন সেই স্ত্রীলোকটিকে বলল, “আল্লাহ্‌ কি সত্যি তোমাদের বলেছেন যে, বাগানের সব গাছের ফল তোমরা খেতে পারবে না?” জবাবে স্ত্রীলোকটি বললেন, “বাগানের গাছের ফল আমরা খেতে পারিতবে বাগানের মাঝখানে যে গাছটি রয়েছে তার ফল সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ বলেছেন, ‘তোমরা তার ফল খাবেও না, ছোঁবেও নাতা করলে তোমাদের মৃত্যু হবে’ ” তখন সাপ(শয়তান) স্ত্রীলোকটিকে বলল, “কখনও না, কিছুতেই তোমরা মরবে নাআল্লাহ্‌ জানেন, যেদিন তোমরা সেই গাছের ফল খাবে সেই দিনই তোমাদের চোখ খুলে যাবেতাতে নেকী-বদীর জ্ঞান পেয়ে তোমরা আল্লাহ্‌র মতই হয়ে উঠবেস্ত্রীলোকটি যখন বুঝলেন যে, গাছটার ফলগুলো খেতে ভাল হবে এবং সেগুলো দেখতেও সুন্দর আর তা ছাড়া জ্ঞান লাভের জন্য কামনা করবার মতও বটে, তখন তিনি কয়েকটা ফল পেড়ে নিয়ে খেলেনসেই ফল তিনি তাঁর স্বামীকেও দিলেন এবং তাঁর স্বামীও তা খেলেনএতে তখনই তাঁদের দুজনের চোখ খুলে গেলতাঁরা বুঝতে পারলেন যে, তাঁরা উলংগ অবস্থায় আছেনতখন তাঁরা কতগুলো ডুমুরের পাতা একসংগে জুড়ে নিয়ে নিজেদের জন্য খাটো ঘাগ্‌রা তৈরী করে নিলেনযখন সন্ধ্যার বাতাস বইতে শুরু করল তখন তাঁরা মাবুদ আল্লাহ্‌র গলার আওয়াজ শুনতে পেলেনতিনি বাগানের মধ্যে বেড়াচ্ছিলেনতখন আদম ও তাঁর স্ত্রী বাগানের গাছপালার মধ্যে নিজেদের লুকালেন যাতে মাবুদ আল্লাহ্‌র সামনে তাঁদের পড়তে না হয়মাবুদ আল্লাহ্‌ আদমকে ডেকে বললেন, “তুমি কোথায়?” তিনি বললেন, “বাগানের মধ্যে আমি তোমার গলার আওয়াজ শুনেছিকিন্তু আমি উলংগ, তাই ভয়ে লুকিয়ে আছিতখন মাবুদ আল্লাহ্‌ বললেন, “তুমি যে উলংগ সেই কথা কে তোমাকে বলল? যে গাছের ফল খেতে আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম তা কি তুমি খেয়েছ?” আদম বললেন, “যে স্ত্রীলোককে তুমি আমার সংগিনী হিসাবে দিয়েছ সে-ই আমাকে ঐ গাছের ফল দিয়েছে আর আমি তা খেয়েছিতখন মাবুদ আল্লাহ্‌ সেই স্ত্রীলোককে বললেন, “তুমি এ কি করেছ?” স্ত্রীলোকটি বললেন, “ঐ সাপ (শয়তান) আমাকে ছলনা করে ভুলিয়েছে আর সেইজন্য আমি তা খেয়েছি

অবাধ্যতার শাস্তিঃ

তখন মাবুদ আল্লাহ্‌ সেই সাপকে (শয়তান) বললেন, “তোমার এই কাজের জন্য ভূমির সমস্ত গৃহপালিত আর বন্য প্রাণীদের মধ্যে তোমাকে সবচেয়ে বেশী বদদোয়া দেওয়া হলতুমি সারা জীবন পেটের উপর ভর করে চলবে এবং ধুলা খাবেআমি তোমার ও স্ত্রীলোকের মধ্যে এবং তোমার বংশ ও স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে আসা বংশের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করবসেই বংশের একজন তোমার মাথা পিষে দেবে আর তুমি তার পায়ের গোড়ালীতে ছোবল মারবেতারপর তিনি সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “আমি তোমার গর্ভকালীন অবস্থায় তোমার কষ্ট অনেক বাড়িয়ে দেবতুমি যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে সন্তান প্রসব করবেস্বামীর জন্য তোমার খুব কামনা হবে, আর সে তোমার উপর কর্তৃত্ব করবেতারপর তিনি আদমকে বললেন, “যে গাছের ফল খেতে আমি নিষেধ করেছিলাম তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনে তা খেয়েছতাই তোমার দরুন মাটিকে বদদোয়া দেওয়া হলসারা জীবন ভীষণ পরিশ্রম করে তবে তুমি মাটির ফসল খাবেতোমার জন্য মাটিতে কাঁটাগাছ ও শিয়ালকাঁটা গজাবে, কিন্তু তোমার খাবার হবে ক্ষেতের ফসলযে মাটি থেকে তোমাকে তৈরী করা হয়েছিল সেই মাটিতে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তোমাকে খেতে হবেতোমার এই ধুলার শরীর ধুলাতেই ফিরে যাবেআদম তাঁর স্ত্রীর নাম দিলেন হাওয়া (যার মানে জীবন”), কারণ তিনি সমস্ত জীবিত লোকদের মা হবেনআদম ও তাঁর স্ত্রীর জন্য মাবুদ আল্লাহ্‌ পশুর চামড়ার পোশাক তৈরী করে তাঁদের পরিয়ে দিলেন

বাগান থেকে তাড়িয়ে দেয়াঃ

তারপর মাবুদ আল্লাহ্‌ বললেন, “দেখ, নেকী-বদীর জ্ঞান পেয়ে মানুষ আমাদের একজনের মত হয়ে উঠেছেএবার তারা যেন জীবন্তগাছের ফল পেড়ে খেয়ে চিরকাল বেঁচে না থাকে সেইজন্য আমাদের কিছু করা দরকারএই বলে মাবুদ আল্লাহ্‌ মাটির তৈরী মানুষকে মাটি চাষ করবার জন্য আদন বাগান থেকে বের করে দিলেনএইভাবে তিনি তাঁদের তাড়িয়ে দিলেনতারপর তিনি জীবন্তগাছের (গন্ধম) কাছে যাওয়ার পথ পাহারা দেবার জন্য আদন বাগানের পূর্ব দিকে কারুবীদের রাখলেন, আর সেই সংগে সেখানে একখানা জ্বলন্ত তলোয়ারও রাখলেন যা অনবরত ঘুরতে থাকল

হযরত আদম ও বিবি হাওয়ার বহু ছেলেমেয়ে হয়েছিল কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র তিনজনের নাম পবিত্র তৌরাত শরীফে পাওয়া যায় যেমন হযরত কাবিল, হযরত হাবিল ও হযরত শেথ হযরত আদমের বয়স যখন নয়শো ত্রিশ বৎসর তখন তিনি মারা যান




No comments

Powered by Blogger.