যেভাবে রাসুল (সা.) রোজা রাখতেন

যেভাবে রাসুল (সা.)  রোজা রাখতেন
রমজান বরকতময় মাসএ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়এ মাসে এমন একটি মহিমান্বিত রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠরসুলে পাক (সা.)-এর রোজাগুলো কেমন ছিল? তিনি সাহরিতে কী খেতেন, ইফতার করতেন কোন ফলটি দিয়ে? আর তাঁর সাহাবিরাই বা রোজা করতেন কোন নিয়মে? সব মুসলমানের মধ্যেই এ সম্পর্কে আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিকরমজানের প্রস্তুতির জন্য শাবান থেকেই নফল রোজা শুরু করতেন নবীজী (সা.)হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল (সা.)-কে শাবান মাস ছাড়া আর কোনো মাসেই এত বেশি নফল রোজা রাখতে দেখিনি। (বুখারি) তিনি (সা.) সাহাবিদেরও রোজার প্রস্তুতির জন্য উৎসাহ দিতেন


হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) কোনো একজনকে বলছিলেন, হে অমুকের পিতা! তুমি কি শাবান মাসের শেষ দিকে রোজা রাখনি? তিনি বললেন, নারসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি রমজানের পরে দুটি রোজা পূর্ণ কর। (বুখারি)রমজানের ঠিক আগে আগেই রসুল (সা.) রমজানের ফজিলত এবং বরকত সম্পর্কে সাহাবিদের জানিয়ে দিতেনএ সম্পর্কে অনেক হাদিসের মধ্যে একটি হাদিস উল্লেখ করছিরসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান বরকতময় মাসএ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়এ মাসে এমন একটি মহিমান্বিত রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ’ (মুসলিম) বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় রসুল (সা.) চাঁদ দেখে রোজা শুরু করতেনহাদিসের বর্ণনা থেকে পাওয়া কেউ এসে তাকে সংবাদ দিত তিনি তা ঘোষণা করার অনুমতি দিতেনতিনি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ এবং চাঁদ দেখেই রোজা ছাড়’ (বুখারি)জাঁকজমকহীন অনাড়ম্বর রোজা পালন করতেন রসুল (সা.)নবীজী (সা.)-এর সাহরি ও ইফতার ছিল সাধারণের চেয়েও সাধারণহজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.) কয়েকটি ভিজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেনভিজা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেনভিজা কিংবা শুকনো খেজুর কোনোটাই না পেলে পানিই হতো তার ইফতার’ (তিরমিজি) রসুল (সা.) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে পছন্দ করতেনইফতারে দেরি করা তিনি পছন্দ করতেন নাতেমনিভাবে রসুল (সা.)-এর সাহরিও ছিল খুব সাধারণতিনি (সা.) দেরি করে একেবারে শেষ সময়ে সাহরি খেতেনসাহরিতে তিনি দুধ ও খেজুর পছন্দ করতেনএ সম্পর্কে সময়োপযোগী একটি হাদিস উল্লেখ করতে হয়আহলে সুফফার অন্যতম সদস্য, সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন আজান শুনে, আর এ সময় তার হাতে খাবারের পাত্র থাকে, সে যেন আজানের কারণে খাবার বন্ধ না করে, যতক্ষণ না সে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ না করেআবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মুয়াজ্জিন এ আজান দিতেন ফজর উদ্ভাসিত হওয়ার পরই। (সুনানে আবু দাউদ, সাওম অধ্যায়, হাদিস নং ২৩৪২; মুসনাদে আহমাদ; ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৫১০, সনদ হাসান।)অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে রসুল (সা.)-এর ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেতবুখারির বর্ণনা অনুযায়ী তিনি (সা.) প্রবাহিত বাতাসের মতো দান করতেনরমজানে রসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে কোরআন শুনাতেনআবার জিবরাইল (আ.) হজরত (সা.)-কে কোরআন শুনাতেনরমজানের রাতে তিনি (সা.) খুব কম সময় বিশ্রাম নিয়ে বাকি সময় নফল নামাজে কাটিয়ে দিতেননির্ভরযোগ্য হাদিস থেকে জানা যায়, রসুল (সা.) তিন দিন সাহাবিদের নিয়ে তারাবি পড়েছেনচতুর্থ দিন থেকে তিনি ঘরে আর সাহাবিরা বাইরে নিজেদের মতো নামাজ পড়তেনখলিফা ওমর (রা.)-এর সময় জামাতে তারাবি পড়ার প্রচলন হয়আমাদের দেশে রমজান এলেই তারাবি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যায়যা মোটেই কাম্য নয়তারাবি সুন্নত নামাজআর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হারামআমাদের সুবিধামতো আমরা নামাজ পড়ব, অসুবিধা থাকলে না পড়বকিন্তু সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করার অধিকার আমাদের কারও নেইশেষ দশ দিন ইতিকাফ করা রসুল (সা.)-এর নিয়মিত সুন্নত ছিলইতিকাফে কদরের রাত তালাশ করাই মূল উদ্দেশ্যঅত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য! শেষ দশকে আমাদের মসজিদগুলো মুসল্লিশূন্য থাকেরসুল (সা.) শাওয়ালের চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তেন

No comments

Powered by Blogger.